আপডেট : ১৯ নভেম্বর, ২০২৩ ১৫:৪২

আবারও সহিংসতা ও দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রের পথে বিএনপি-জামায়াত

নিজস্ব প্রতিবেদক
আবারও সহিংসতা ও দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রের পথে বিএনপি-জামায়াত

স্বাধীনতা লাভের পাঁচ দশক পর তলাবিহীন ঝুড়ি বলে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। নানা আন্তর্জাতিক ফোরাম থেকে বাংলাদেশের এই উন্নয়নের প্রশংসা করা হচ্ছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে লাল-সবুজের বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উত্তরণের সুপারিশ করেছে জাতিসংঘ।

আনুষ্ঠানিক অনুমোদনের মধ্য দিয়ে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটলো বাংলাদেশের। ৭৫ বছর আগে স্বাধীন হওয়া পাকিস্তানকে এরই মধ্যে উন্নয়নের সব সূচকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। অনেক সূচকে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতকে ছাড়িয়ে গেছি আমরা।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব থাকা শেখ হাসিনা শত ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে, মৃত্যুভয়কে তুচ্ছ করে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। এসময় অর্জন করেছেন বিশ্বের ইতিহাসে দীর্ঘতম সময়ে নারী প্রধানমন্ত্রী হয়ে দেশ পরিচালনার রেকর্ড। সব মিলিয়ে আজ বাংলাদেশ গোটা বিশ্বে এক মর্যাদার নাম।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে ও আগামী জাতীয় নির্বাচনকে প্রতিহত করতে আগে থেকেই সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ছিল পাকিস্থানপন্থি বিএনপি-জামায়াত জোটটির । দেশের অভ্যন্তরে জ্বালাও-পোড়াও করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টির জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে । শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের নামে সারা দেশে আগুন সন্ত্রাস শুরু করেছে এই জোটটি। দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন কর্মসূচীকে জনসম্পৃক্ত করে তুলতে না পারা এবং আন্দোলনের জন্য নতুন ইস্যু সৃষ্টির ব্যর্থতায় সহিংসতার পথ বেছে নিয়েছে জোটটি।সরকার পতনের এক দফা দাবিতে গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ‘মহাসমাবেশের’ ডাক দেয়বিএনপি। একই সাথে একই দিনে সমাবেশ করে জামায়াত। সেদিন সকাল থেকে সমাবেশের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জোটটিরনেতাকর্মীরা সহিংস হয়ে উঠতে থাকে। একপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন তারা। পিটিয়ে হত্যা করে পুলিশের এক সদস্যকে।রাজধানীর কাকরাইলে বাসে আগুন, সাংবাদিকদের ওপর হামলা, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্সসহ অন্তত ৭টি গাড়িতে আগুন দেয় দলটির নেতাকর্মীরা। এমন কর্মকাণ্ড নির্বাচন এলেই সহিংসতা ও আগুনসন্ত্রাসে অভ্যস্ত বিএনপি-জামায়াতকে তাদের স্বরূপে ফেরাই ।তারাযে জনগণের ওপর নির্ভরশীল নয়, জনগণের রায়ের ওপর শ্রদ্ধাশীল নয় এবং তারা যে ক্ষমতার সোনার হরিণের জন্য হিংস্র হয়ে উঠতে পারে তার প্রমাণ পাওয়া যায় এইসব কর্মকাণ্ডে।

বিএনপির সমাবেশ মানেই জ্বালাও-পোড়াও, তাদের আন্দোলন মানেই আগুন সন্ত্রাস এবং তাদের ঘোষিত হরতাল মানেই এদেশের মানুষের ভোগান্তি, জান-মালের ক্ষতি । জ্বালাও-পোড়াও, সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদ যাদের কর্মকাণ্ড তারা কোনদিন সুষ্ঠু ধারার রাজনীতি করতে পারেনা সেটাই আবারপ্রমাণ করলোতারা ।করেন।এখন পর্ন্ত বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধ কর্মসূচীতে ১৫০টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ২০০টি গাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে বলে দাবি করেছে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। 

বিএনপির জামাতের সমাবেশ, হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচিসহ সরকারবিরোধী আন্দোলনে সারা দেশে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় হয়েছে অনেক মামলা। সেসব মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মির্জা আব্বাস, যুগ্ম সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে। সরকারবিরোধী আন্দোলনের এই পর্যায়ে এসে শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তারে দুশ্চিন্তা ভর করেছে বিএনপি শিবিরে। যদিও দলটির নেতারা বলছেন, শীর্ষ নেতারা গ্রেপ্তার হলেও চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলন তার গতিতে চলবে।

শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বে করোনা মহামারী ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কা সামলে দেশে  মানুষের জীবন যাত্রা যখন স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে, ঠিক তখন আবার বিএনপি জামায়াত জোট আগুন সন্ত্রাসের খেলায় মেতে উঠেছে।সাম্প্রতিক দিনগুলোতে তারা এবারও লাগাতরঅবরোধ-ধর্মঘট শুরু করেছে সাথে শুরু হয়েছে তাদের সহিংসতা ও আগুন সন্ত্রাস।বিনপির শীর্ষ নেতা সাজাপ্রাপ্ত আসামী তারেক রহমান দেশের মাটিতে না ফিরে লন্ডনে বশে ভিডিও বার্তায় হারতাল অবরধের ডাক দিয়ে সহিংসতা উস্কে দিচ্ছে। ফলে মানুষের দুর্দশা ও জীবন ঝুঁকিবাড়ছে।এছাড়াওদেশের অর্থনীতির চ্যালেঞ্জিং সময়ে ঘোষিত হরতালের কারনে  হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে বলে মত অর্থনীতিবিদদের।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের বিরোধিতা করে বিএনপি জোটের ভয়াবহ সন্ত্রাসের তান্ডব কেউ ভোলেনি। তখন শত শত যানবাহন পুড়িয়ে দেয়া হয়। পেট্রোল বোমার আঘাতে দগ্ধ মানুষের আহাজারিতে হাসপাতালগুলোর বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। পবিত্র উপাসনালয় মসজিদ, মন্দির, গির্জায়ও আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি লাখ লাখ গাছও। নির্বাচনের দিন প্রিসাইডিং অফিসারসহ হত্যা করা হয় ২৬ জন নিরীহ মানুষকে। সারাদেশে ৫৮২টি ভোটকেন্দ্রে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া তারা।

এসব বাধা অতিক্রম করে সেদিন জনগণ মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া দল আওয়ামীলীগকে তথা গণতন্ত্রকে বিজয়ী করেছিল। ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি সরকারের এক বছর পূর্তির দিনও বিএনপি জামায়াত চক্র আবার জ্বালাও-পোড়াও করে বাস, ট্রেন, লঞ্চ, সরকারি স্থাপনাগুলোতে পেট্রোল বোমা মেরে সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে। ওই সময়  অনেক মানুষকে  হত্যা করা হয় এবংঅসংখ্য মানুষ মারাত্মকভাবে আহত হয়।  বাস-ট্রাক,  ট্রেন, যাত্রীবাহী লঞ্চ,  ভূমি অফিসসহ অনেক সরকারি অফিসে আগুন দেয় তারা। একাত্তর সালের পাকিস্তানি হানাদারদের মতো ভয়াবহতা চালায়। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন শেখহাসিনার সরকার সেদিন জনগণকে সাথে নিয়ে দুর্বৃত্তদের পরাভূত করে দেশকে স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে এসেছিল। বিজয়ী হয়েছিল গণতন্ত্র, যার পথ ধরে আজ আমাদের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।বাংলাদেশের মানুষ শান্তি চাই , সম্প্রীতির মধ্যে বসবাস করতে চাই। সন্ত্রাস, রাহাজানি, হরতাল, অবরোধ এ দেশের জনগণঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে ।

বিএনপি-জামায়াত জোট মনে করেছে এবং এখনো করছে, আর ক'দিন হরতাল অবরোধ করা গেলেই সরকারের  পতন হবে। কিন্তু তারা এটা লক্ষ করেনি যে আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস করার জন্য এদের জনপ্রিয়তা বাংলাদেশের মানুষের নিকট কমে গিয়ে বাড়ছে জনবিচ্ছিন্নতা। দেশে-বিদেশে তাদের ভাবমূর্তির দিকেও লক্ষ করেনি তারা। এ দল যে 'সন্ত্রাসী সংগঠন' বলে সাব্যস্ত হচ্ছে– রাষ্ট্রক্ষমতায় ফিরে যাওয়ার মোহে সেদিকেও তাকাননি বিএনপি নেতৃত্ব। জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে সন্ত্রাসময় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ফলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যে বিএনপিকে জঙ্গি উত্থানের দায়ে অভিযুক্ত করেছে এবং আরোও করতে পারে, সেটাও তাদের মাথায় কাজ করছেনা।

বিএনপি যে একটি সন্ত্রাসী দল, সেটা যে শুধু প্রতিপক্ষ দল হিসেবে আওয়ামী লীগই বলছে, সেটাই নয়। কানাডার ফেডারেল আদালত বিএনপির একজন নেতার রাজনৈতিক আশ্রয় মামলার রায়ে বলেছে যে, বিএনপি প্রকৃতপক্ষে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। বিএনপি এমন একটি দল যারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরনে সশস্ত্র সংগ্রাম বা সহিংসতার আশ্রয় নেয়। হাতবোমা, পিস্তল ও অস্ত্র ব্যবহার করে নেতৃস্থানীয় এবং জনগণের ওপর হামলা চালায় বিএনপি। এমনকি অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনাও ঘটায় দলটি। হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়েই বিএনপির জন্ম, তাই তারা গণতান্ত্রিক আন্দোলনে কখনও বিশ্বাস করে না। বিএনপির আন্দোলন মানেই জ্বালাও-পোড়াও ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম করে জনগণের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করে তাদেরকে জিম্মি করে রাখা। এ জন্যই তারা জনগণ থেকে অনেক দূরে চলে গেছে। 

বাংলাদেশের নির্বাচনব্যবস্থা, অভ্যন্তরীণ রাজনীতি কেমন হবে, সেটি আমাদের দেশের জনগণেরই ঠিক করার কথা। বিএনপির বিদেশ নির্ভরতা বিদেশীদের আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে কথা বলার সুযোগ করে দেয়। মেরুদণ্ড সোজা না হলে এমনই হয়।বিএনপি বিশ্বাস করে বন্দুকের শক্তি, ষড়যন্ত্র আর বিদেশিদের ওপর ভর করে ক্ষমতায় যাওয়া যায় । স্বাধীন ও সার্বভৌম একটি দেশে বিএনপি জামায়াত গোষ্ঠীর বিদেশিদের কাছে নিজেদের অস্তিত বিলিন করে ক্ষমতাই বসার জন্য দেশের বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো খুবই দুংখজনক ও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র বলেই প্রমান হয় ।

বাংলাদেশকে ঘিরে জিওপলিটিক্সেরযে গুরুত্ব, তা নতুন কিছু নয়। বৈশ্বিক পরিস্থিতির পরিবর্তন হলেও ভূ-রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে আমাদের দেশের গুরুত্ব কখনোই কমেনি। এখন ভারত মহাসাগরীয় কৌশলের প্রেক্ষাপটে এবং বাংলাদেশের অবস্থানগত কারণে আমাদের নিয়ে পশ্চিমাদের মনোযোগ আগের থেকে বেড়েছে।উল্লেখ্য, বাংলাদেশের রাজনীতিতে বৈদেশিক হস্তক্ষেপ অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেপরোয়া ও দুরভিসন্ধিমূলক।এছাড়াওবিএনপি লবিস্ট নিয়োগ করেছে যুক্তরাষ্ট্রে যেন তারা বাংলাদেশে কোনো সহায়তা না দেয় ।বিএনপি জামায়াত দেশের স্বার্থ বিরোধী অপপ্রচার চালানোর জন্য এসব লবিস্ট  নিয়োগ দিয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের গভীর সম্পর্ক। তারা এখানে অনেক বিনিয়োগ করেছে। এতে আমাদের উন্নয়ন হয়েছে। তবে এই বিনিয়োগ যেন না করে, সেজন্য লবিং হয়েছে। যারা এসব করেছে, তারা বাংলাদেশের মানুষের মঙ্গল চায় না’।বিএনপি জামায়াত জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করে না। তারা মনে করে দূতাবাসে দূতাবাসে ঘুরে বেড়ালে বিদেশিরা তাদের  ক্ষমতায় বসাবে। কিন্তু এদেশের ক্ষমতায় বসানোর মালিক হচ্ছে জনগণ।

 

 

উপরে