যেভাবে বানাবেন খেজুরের রসের সেমাই পিঠা | BD Times365 যেভাবে বানাবেন খেজুরের রসের সেমাই পিঠা | BdTimes365
logo
আপডেট : ২৩ নভেম্বর, ২০১৫ ১৭:৪২
যেভাবে বানাবেন খেজুরের রসের সেমাই পিঠা
অনলাইন ডেস্ক

যেভাবে বানাবেন খেজুরের রসের সেমাই পিঠা

বাংলাদেশের সংস্কৃতির সাথে মিশে আছে পিঠা। কিন্তু এই শহুরে জীবন পিঠার সাথে আমাদের সম্পর্কটা কেবল দোকানের ভাপা পিঠা আর চিতই পিঠার সাথেই করে তুলেছে। বাসায় পিঠা বানানো প্রচলন আমরা ভুলেই গিয়েছি। আবার আমরা আনেকেই আছি পিঠা ঠিক মতো বানাতেও জানি না। বিভিন্ন ধরনের ফাস্ট ফুড আমাদেরকে পিঠা বানানো কিংবা খাওয়ার প্রতি আগ্রহ কমিয়ে ফেলেছে অনেক বেশী। কিন্তু এটা আমাদের সংস্কৃতির বিরাট একটা  অংশ। কালের বিবর্তনে হারাতে বসেছি আমাদের সেই সংস্কৃতি।

পিঠা বানানো যেমন সহজ কাজ না তেমনি পিঠার উপকরণ হাতের কাছে পাওয়া যায় না সব সময়।তাই আমাদের বাসা বাড়িতে ঠিক মতো হয়ে উঠে না পিঠা বানানো। সর্বোপরি পিঠা বানাতে যে ধৈর্য্য বা সময়ের দরকার তাও বা এই ব্যাস্ত শহরে বাস করা কয়টা পরিবারের আছে! জীবন যাত্রার মান এবং সময়ের অভাবে শহরে এখন আর পিঠা বানানো হয়ে উঠে  না অনেকেরই।
 এদিকে না দেখতে দেখতে এবং না খেতে খেতে এই শহুরে পরিবার গুলোর শিশুদেরও পিঠা খাওয়ার প্রতি আগ্রহ কমে গেছে। তারা পিঠার চেয়ে অন্য সব খাবারেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। শীতকালে পিঠায় যে স্বাদ থাকে তা আমাদের এই শহুরে শিশুরা আর পাচ্ছে না। ফলে এই শিশুরা বড় হয়ে আর পিঠার প্রতি আগ্রহ দেখায় না।

অন্যদিকে পিঠা বলতে রাস্তার ধারে বানানো চিতই বা ভাপা পিঠা দেখে ওরা মনে করে এগুলোই আমাদের পিঠা। কিশোরেরা মাঝে সাজে কখনো রাস্তার ধারের এই সকল পিঠা টেষ্ট করে, কিন্তু পিঠার মুল স্বাদ পায় না। ফলাফল আর কখনো পিঠা খেয়েই দেখে না। এদিকে শহরে জন্ম নেয়া কিছু ধনী পরিবারের সন্তানদের পিঠা নিয়ে একটা বাজে ধারনা শিশুকাল থেকেই গড়ে উঠে।তারা মনে করে পিঠা গরীবের খাবার! ফলে পিঠা গ্রাম থেকে কোন আত্মীয় স্বজন বানিয়ে পাঠালেও ধনীদের শিশুরা তা মুখে দিয়েও দেখে না!

সে অনেক কথা। পিঠা নিয়ে আলোচনা করলে সাগরের পানি কালি হলেও কম হয়ে যাবে। চলুন আজ গ্রামীন একটা চমৎকার পিঠা বানানোর প্রক্রিয়া দেখি আসি। হাতে বানানো সেমাই পিঠা, রান্না হয়েছে খেজুরের রসের রাব দিয়ে।
পরিমান ও উপকরনঃ
– হাফ কেজি বা তার কম চালের গুড়া (আমরা মোটামুটি এক কাপ হাতে বানানো সেমাই পিঠা নিয়েছি, বাকী কাই রেখে দিয়েছিলাম)
– সামান্য লবন/পানি (কাই বানাতে যা লাগে)
– এক লিটার দুধ বা তার কম দুধকে জ্বাল দিয়ে হাফ লিটার বা তার কম করে নিতে হবে।
– দুই তিনটে এলাচি
– দুই তিন টুকরা লবঙ্গ
– হাফ কাপ নারিকেল কুরানো
– পরিমান মত খেজুরের রাব বা গুড়।
প্রস্তুত প্রনালীঃ

শুরু থেকে দেখাতে গেলে ছবি অনেক বেশী হয়ে যায় তাই এখান থেকেই দেখানো হল। চালের গুড়ায় সামান্য লবন দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে অল্প অল্প কুসুম গরম পানি দিয়ে গুলে গুলে অবশেষে হাত দিয়ে ভাল করে মাখিয়ে এই কাই বানিয়ে ফেলতে হবে। কাই বানিয়ে পাত্রে রেখে ঢেকে রাখতে হবে। এই কাইটা খুব নরম না, আবার খুব শক্তও হবে না। কাই থেকে ছোট ছোট গোলা করে নিন।
 

এবার কাইয়ের গোলা কে হাত দিয়ে বেলে মোটা সুতায় রুপান্তরিত করুন। মোটা সুতা থেকে চিকন সুতা (যত চিকন করে ফেলায় যায় ততই স্বাদ বা দেখেতে ভাল দেখায়) করে ফেলুন। অনেকটা এমন।
 

এটাই হচ্ছে টেকনিক। কাই সুতার সামান্য চিড়ে হাতের তালু একবার পিছনে এবং আবার সামনে এনে ঘষা দিয়ে কাই সুতার দুই মাথাই চিকন করে ফেলা হয়।
 
এভাবে জমিয়ে ফেলতে হবে।
 
চালুনী দিয়ে চেলে পিঠা গুলোকে আলাদা করে নিতে হবে। তবে এভাবে পিঠা গুলোকে কিছুক্ষন রেখে দেয়াই ভাল। ঘন্টা খানেক বা তারও পরে বের করে রান্না করাই উত্তম।
 
পিঠা বানানো শেষ হয়ে গেলে একটা হাড়িতে দুধ গরম করতে থাকুন। দুধে কয়েকটা এলাচি এবং কয়েক টুকরা দারুচিনি দিতে ভুলবেন না। (দুধ গরম করতে সাবধান! যারা নূতন রান্না করছেন তাদের জন্য বলছি, সামান্য বেখালিতেই দুধ উপছে পড়ে যেতে পারে।)

পিঠা সহ এই হচ্ছে যাবতীয় উপকরণ। কুরানো নারিকেল, রাব (আপনারা চাইলে খেজুরের গুড় বা চিনি দিয়েও রান্না করতে পারেন)।
 
এবার দুধে খেজুরের রাব দিন। রার দিতে থাকবেন এবং নাড়াবেন। (ভাল রাব হওয়া চাই, গুড় বা রাবে যদি সোডা থাকে তবে দুধ ফেটে যেতে পারে তাই বিশুদ্ধ হওয়া উচিত)
 
নারিকেল কুরানো দিয়ে দিন, ভাল করে জ্বাল হয়ে গেলে এবার পিঠা দিয়ে দিন এবং নাড়িয়ে দিন।
 
এই হচ্ছে ফাইন্যাল প্রোডাক্ট। জিহব্বায় লাগিয়ে মিষ্টি দেখুন, যদি আরো মিষ্টি চান তবে আরো রাব বা গুড় দিতে পারেন।  আমি কম মিষ্টি পছন্দ করি।
 
ব্যস, পরিবেশনের জন্য প্রস্তুত। হাতে বানানো সেমাই পিঠার রান্না।
ঠান্ডা বা গরম দুভাবেই খাওয়া যেতে পারে। আপনার যেমন ইচ্ছা। রাতে বানিয়ে সকালেও খাওয়া যেতে পারে।

বিডিটাইমস৩৬৫ডটকম/মিঠু পাল